একটি আমগাছ ও আমার ছেলেবেলা || আতাউল গণি - কুঁড়েঘর
একটি
আমগাছ ও আমার ছেলেবেলা
আতাউল গণি
অনেকের মতো দুরন্ত
ছেলেবেলা আমারও ছিল। তবে, একটু ব্যতিক্রম। আমার সমসাময়িক কেউ
আমার সাথে তাল মেলাতে পারতো না বলে অধিকাংশ সময় আমার দুরন্তপনা, দুরদর্শিতা ছিল একান্তই একার। সবার সাথে যা হতো
তা ছিল নিতান্তই ভাবনীয়। কিন্তু, কিছু কর্মকান্ড ছিল যা আমি একান্তই একাকী
করে থাকতাম। ভেবে এখনো মজা পাই যে,
আমার
এবং আশে পাশের এলাকার সকল জ্বীন, ভূত, পিশাচ,
শয়তানগুলো রাতে আমাকে দেখে ভয় পেতো। রহস্য শুধু আমার মধ্যেই
থাকতো, কোন মানুষ বা প্রকৃতিতে
থাকতো না।
প্রকৃতিও যে আমার
দ্বারা উৎকন্ঠা বোধ করতো তার এক জলন্ত প্রমাণ ছিল এক আমগাছ, যে হয়তো আজও সৃষ্টিকর্তার কাছে নালিশ দিচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। সে দিতেই পারে। কারণ, সে যে আমার দুরন্ত শৈশবকালের চরম যন্ত্রণা পোহাইছে।
যখনি প্রকৃত ভালবেসে আমগাছটিকে ফুল আর ফলের সম্ভানা দিয়েছে, তখনি আমার মস্তিস্কে তা ভোগ করার কৌশল আটকেছে। কৌশল বললে ভুল হবে, প্রতিনিয়ত নিষ্ঠুর শোষনের এক ছক এঁকেছে।
পুকুর পাড়ে পুকুরের পানি আর ছায়াহীন সদা রৌদ্র দিয়ে যেই গাছটি তার ফুলকে ফলে পরিণত করত, আমি তখনি তাদের গায়ে আমার জিহ্ববার আহ্লাদের জল মেখে দিতাম, আর বলতাম, সোনা, তোমার কাঁচাপাকা মিস্টি স্বাদ শুধুই আমার। দু-এক সপ্তাহ এমন অত্যাচারই করতাম। কিন্তু, প্রতিদিন এমন যাতায়াত গাছটি কতটা পছন্দ করতো না জানলেও, আমার ঠিকই অপছন্দ হতো খালি হাতে ফেরাটা। তাই যখন বোধ করতাম এইবার মুখে দিবার যোগ্য হয়েছে তখনি প্রয়োগ করতাম কৌশল। কারণ, আমার কাঁচা শক্ত আম চিবোতে দাঁতের পরিশ্রম সহ্য হতো না। তাই আম ধরা ডাল টা ভেঙে ফেলতাম, যাতে আম টা গাছ থেকে আর খাবার না পেয়ে আমার খাবারের উপযোগী হয়। পরের দিন গিয়ে যখন দেখতাম আমখানা অনাহারে ফ্যাকাশে বা লালচে আর নরম হয়ে গেছে, তখন অতি তৃপ্তি নিয়ে তা ভক্ষণ করতাম। আহ, কাচা আমে পাকা স্বাদ। এভাবেই চলত আমগুলি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত।
পুকুর পাড়ে পুকুরের পানি আর ছায়াহীন সদা রৌদ্র দিয়ে যেই গাছটি তার ফুলকে ফলে পরিণত করত, আমি তখনি তাদের গায়ে আমার জিহ্ববার আহ্লাদের জল মেখে দিতাম, আর বলতাম, সোনা, তোমার কাঁচাপাকা মিস্টি স্বাদ শুধুই আমার। দু-এক সপ্তাহ এমন অত্যাচারই করতাম। কিন্তু, প্রতিদিন এমন যাতায়াত গাছটি কতটা পছন্দ করতো না জানলেও, আমার ঠিকই অপছন্দ হতো খালি হাতে ফেরাটা। তাই যখন বোধ করতাম এইবার মুখে দিবার যোগ্য হয়েছে তখনি প্রয়োগ করতাম কৌশল। কারণ, আমার কাঁচা শক্ত আম চিবোতে দাঁতের পরিশ্রম সহ্য হতো না। তাই আম ধরা ডাল টা ভেঙে ফেলতাম, যাতে আম টা গাছ থেকে আর খাবার না পেয়ে আমার খাবারের উপযোগী হয়। পরের দিন গিয়ে যখন দেখতাম আমখানা অনাহারে ফ্যাকাশে বা লালচে আর নরম হয়ে গেছে, তখন অতি তৃপ্তি নিয়ে তা ভক্ষণ করতাম। আহ, কাচা আমে পাকা স্বাদ। এভাবেই চলত আমগুলি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত।
কখনও ভাবতাম না আমার এমন হীন রুচি মেটানোর প্রয়াস আমগাছটির কেমন লাগতে পারে। কখনো ভাবেনি যে গাছটি অতি ধৈর্য্য আর সাধনা
দিয়ে ফল দিয়েছে তার কষ্ট হতে পারে। কষ্ট হতে পারে আমটিকে ধারণ করা
ডালটির, কষ্ট হতে পারে আমটির, কষ্ট হতে পারে আমের ভিতরে বেড়ে ওঠা অপ্রাপ্ত আটির যার সম্ভাবনা ছিল আরো সহস্র
বৃক্ষ জন্ম দেবার।
আজ গাছটি নেই, তার বংশও নেই। এটা ভাবতেই কষ্ট হয়, অপরাধ বোধ হয়। আমি শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। তুমি আমাকে ক্ষমা করো না। তুমি বিচার দিয়ে রাখো, যেনো তোমাকে একান্ত আমার ভেবে তোমাকে ভোগ করার
জন্য আমার শাস্তি হয়। আমি অজুহাত দেখাব না। আমি তো সত্যিই তোমাকে অতি
ভালবেসে অতি তৃপ্তির লোভে তোমাকে আমার দুরন্ত শৈশবের শিকার বানিয়ে ছিলাম।
No comments