শিরোনাম

প্রজন্মের ছাত্র হিসেবে বিজয়ে গর্বিত || আজহার মাহমুদ

প্রজন্মের ছাত্র হিসেবে বিজয়ে গর্বিত

আজহার মাহমুদ

প্রজন্মের ছাত্র হিসেবে বিজয়ে গর্বিত। আনন্দে উল্লসিত মহান বিজয় দিবসে। মহান বিজয় দিবস ১৯৭১ থেকে ২০১৭। হাঁটি হাঁটি পা পা করে স্বাধীনতার ৪৭ বছর শেষ হলো। এ প্রজন্মের ছাত্ররা '৭১ দেখেনি কিন্তু '৭১-এর ইতিহাস জেনেছে। দেখেনি '৭১-এর বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা, তবে শুনেছে সেই ভয়ানক দিনগুলোর কথা। দেখেনি ৩০ লাখ শহিদের তাজা রক্ত, দেখেছে তাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ। মা বোনের সম্ভ্রম হারাতে দেখেনি তবে সেই নিষ্ঠুর ইতিহাস পড়ে চোখের জল ফেলেছে অনেকে। দেখেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কিন্তু শুনেছে তার ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। জেনেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কী ছিলেন। প্রজন্মের ছাত্র হিসেবে আজ আমরা দেখছি আমাদের এই সাজানো সোনার বাংলাকে, তবে এ সোনার বাংলা গড়ার কারিগর কারা ছিলেন তা আমরা জানতে চাই না কিংবা জেনেও স্বীকার করতে চাই না। আজ আমরা যাদের কারণে এই সোনার বাংলায় মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছি তাদেরই স্মরণ করি না। আমরা বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ হয়তো সকলের কথা স্মরণ করছি কিন্তু বিজয় দিবস ব্যতীত কি তাদের অবদান আমরা ভুলে যাবো? আমরাতো আসলে তাই করি। দেশের জন্য যারা নিজের জীবন দিয়েছেন তাদের যারা ভুলে যেতে পারে তারা কখনো দেশপ্রেমিক হতে পারে না। দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে তারা অবশ্যই এই দেশ যারা আমাদের উপহার দিয়েছে তাদের ভালোবাসবে। আজ আমাদের এই দেশ পেয়েছি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। যাদের রক্তে আমরা আজ এদেশে বসবাস করছি তাদের কেনো ভুলে যাবো? প্রশ্নটার উত্তর কেউ দিতে চায় না। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি স্বাধীন দেশ। তবে আমাদের এই দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা। ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় এবং স্বাধীনতা। এই বিজয়ের কারণে আজ আমরা আমাদের দেশে উন্নয়ন দেখছি। বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ আমাদের দেশের উন্নয়ন সকলেই দেখছে। আমাদের দেশে এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এখন প্রতিটি স্কুল, মাদ্রাসায় জানুয়ারির ১ তারিখেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। গরিব শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। এরকম উন্নয়ন শুধু শিক্ষা খাত নয় দেশের প্রতিটা খাতেই এখন লক্ষণীয়। আজ আমাদের দেশে নির্মাণ হতে যাচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যা প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে তার ঢালাই কাজ উদ্বোধন করেছেন। এভাবে দেশের নানা স্থানে হাজারো উন্নয়নের দৃশ্য দেশের মানুষ আজ দেখেছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে কারণ আজ আমরা স্বাধীন এবং বিজয়ী দেশ। এখন আমাদের দেশের উন্নয়নে কেউ বাধা দিতে পারবে না। বিশ্বে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রজন্মের প্রত্যাশা রয়েছে অনেক। আজ আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের অভাব নেই। আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই পর্যাপ্ত। যার কারণে আজ আমাদের দেশে পড়া লেখা করেও হাজারো শিক্ষার্থীর শিক্ষা শেষে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ মেলে না।
তারা কর্মসংস্থানে সুযোগ না পেয়ে চলে যায় ধ্বংসের পথে। অনেক সময় তারাই দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে অনেকে তখন জীবনের তাগিদে নোংরা এবং ঘৃণ্যতম কাজ বেছে নেয়, যা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তারা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ছে, অনেক সময় হয়ে উঠছে দেশের জন্য বিপদগামী। তাদের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে কতিপয় মহল তাদের হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। তাই বর্তমান সরকারের কাছে এ প্রজন্মের ছাত্রদের সকল প্রত্যাশার মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থা তৈরি করে দেয়া। যাতে কোনো শিক্ষিত বেকার দেশের বোঝা হয়ে না থাকে। কোনো শিক্ষিত ছেলে যেনো কর্মসংস্থানের অভাবে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে। বিজয়ের এ মাসে প্রজন্মের ছাত্র হিসেবে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চাওয়া থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মসংস্থান যোগান দেয়া। তবেই প্রজন্মের ছাত্ররা সরকারের উপর ভরসা রাখতে পারবে। আমরা যখন দেখি দেশে মারামারি, খুন, গুম, চুরি ছিনতায়, ডাকাতি, এমনকি ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট এবং নোংরা অপরাধ চলছে তখন প্রজন্মের কাছে এ বিজয়ের আনন্দ মলিন হতে দেখা যায়। বিজয়ের মাসে যেনো চেখের সামনে পরাজয় দেখছি আমরা। বিজয় হতে হবে বিজয়ের মতো। আমরা সকলে হয়তো জানি স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন আজ আমাদের কাছে বিষয়টিও তেমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমাদের দেশের মানুষ ভয়হীন বাঁচতে পারছে না। বাজারে গেলে ছিনতায়কারীর ভয়, ঘরে আসলে ডাকাতের ভয়, গাড়িতে উঠলে পকেটমারের ভয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গেলে সন্ত্রাসীর ভয়। ভয় আর ভয়। ভয়হীন বাঁচা যেনো এখন আমাদের কাছে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরেও আজ আমরা বিজয়ের গান গাইছি। বিজয় তো আমরা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অর্জন করেছি, কিন্তু আমরা এখনো নিজেদের কাছ থেকে নিজেরা বিজয় অর্জন করতে পারিনি। আমাদের দেশের ভেতরে রয়েছে এখন আমাদের দেশের এবং দেশের মানুষের শত্রু। এ শত্রুকে মোকাবিলা করতে আজ আমরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। ১৯৭১ সালে আমরা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সকলে এক হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু আজ আমরা সকলে দেশের ভেতরের শত্রুদের বিরুদ্ধে এক হয়ে রুখে দাঁড়াতে পারছি না। এর চাইতে বড় পরাজয় আর কি হতে পারে আমাদের কাছে। এ বিজয়ের মাসে প্রজন্মের প্রত্যাশা হিসেবে এটাও একটা বড় চাওয়া। আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এখন যুদ্ধ করতে হবে দেশ রক্ষার জন্য। দেশের মানুষের নিরাপত্তা, শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য। এ যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য বর্তমান সরকারকে সাহায্য করতে হবে আমাদের। '৭১ যেমন দেশের সকল মানুষ বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি আজও আমাদের সকলের বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকতে হবে। তবেই এ যুদ্ধে জয়লাভ করা আমাদের পক্ষে সহজ হবে। বিজয়ের এ মাসে আমাদের সকলের প্রতিজ্ঞা হওয়া চাই দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য আমাদেরে প্রাণ হাসি মুখে বিলিয়ে দিবো। তবেই বিজয়ের মাসে আমাদের সত্যিকারের বিজয় হবে। এ প্রজন্ম আরো একটি বিজয় চায়, সেটা হলো সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিজয়। আমাদের দেশকে এখন মুক্ত করতে হবে এসব হায়না থেকে। বের করতে হবে তারা কাদের ছত্রছায়ায় আছে। উচ্ছেদ করতে হবে এসকল দেশ বিরোধী হায়নাদের। তবেই দেশ এবং দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে। এ প্রজন্মের ছাত্র হিসেবে বিজয়ের মাসে সকলের কাছে এর চেয়ে ভালো কিছু আর কি চাওয়া যেতো তা আমার জানা নেই। তাই বিজয়ের এ মাসে বর্তমান সরকারের কাছে এ প্রজন্মের চাওয়া থাকবে সার্বিক বিজয় এনে দেয়া। বিজয়ের মাসে এর চাইতে বড় উপহার আর কিছুই হতে পারে না । সেই উপহারের অপেক্ষায় আছে দেশের মানুষ এবং এ প্রজন্মের ছাত্ররা।

লেখক : আজহার মাহমুদ
প্রবন্ধিক ও ছড়াকার।
শিক্ষার্থী:  বিবিএ. (অনার্স), হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (২য় বর্ষ), ওমরগনী এমইএস কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

No comments